
মোঃ মাসুদ রানা, স্টাফ রিপোর্টার :
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের তোফেল মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর নতুন একটি শাখা বের হয়ে শত শত বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে ইতোমধ্যে হাজারো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছেন। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে তিস্তার ভাঙনে বহু গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে গেছে, বিলীন হয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, খেলার মাঠসহ বহু স্থাপনা। তবে এবারের ভাঙনের তীব্রতা আগের তুলনায় আরও বেশি। প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার মিটার পাড় ভেঙে যাচ্ছে, যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, বাজার ও ঘাটও এখন ঝুঁকির মুখে।
এই পরিস্থিতিতে ভাঙনরোধে অবিলম্বে জিও ব্যাগ ফেলার দাবিতে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বেলা ১২টায় গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের তিস্তা পাড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রিভারাইন পিপল নীলফামারী জেলা সমন্বয়ক জনাব আব্দুল ওদুদ
টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন, বিএনপি সভাপতি প্রভাষক ইয়াসিন আলী, গয়াবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ লিটন, ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বাবর আলী, ডিমলা উপজেলা জিয়া পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর খানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃষক ও শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ছোটখাতা ২নং গ্রোইন থেকে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দীঘিরপাড় রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ মিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে পাড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তা না হলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না এবং অল্প সময়ের মধ্যেই আরও কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, বহুবার প্রশাসন ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা অবিলম্বে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
স্থানীয় কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, “ভাঙনে আমার তিন বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। এবার যদি বাঁধ না দেওয়া হয়, তবে ঘরবাড়ি ও বাকি জমিও থাকবে না।” গৃহবধূ লায়লা বেগমের চোখে পানি, “প্রতিদিন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি—আমাদের সবকিছু একটু একটু করে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে।” কৃষক রজত আলী জানান, “আমি ভ্যানগাড়ি চালাই। অনেক কষ্ট করে ৩ লাখ টাকা দিয়ে দুই বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছিলাম। এবার পুরো ক্ষেতে পলি পড়ে গেছে। এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারব না।”
মানববন্ধন শেষে স্থানীয়রা নদীর পাড় ঘুরে দেখান এবং দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।