শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বৈশাখীপাড়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ৫০ শয্যার নতুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে দীর্ঘ ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। সকল অবকাঠামো ও চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুত থাকলেও, একটি আইনি জটিলতার কারণে হাসপাতালটির কার্যক্রম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার হাজারো মানুষ।
২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের সব ব্যবস্থা—আইসিইউ, প্যাথলজি, অপারেশন থিয়েটার, আবাসন সুবিধাসহ আরও পাঁচটি সহায়ক ভবন। তবে উদ্বোধনের দিন নির্ধারিত থাকলেও (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) স্থানীয় বিরোধের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।
জানা গেছে, পুরোনো হাসপাতালের কার্যক্রম মুলফৎগঞ্জ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষ হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। এর ফলে নতুন হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।
২০১৮ সালে পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে মুলফৎগঞ্জের পুরোনো হাসপাতাল নদীগর্ভে চলে যায়। পরে সাময়িকভাবে চিকিৎসাসেবা চালু রাখতে পার্শ্ববর্তী সরকারি কোয়ার্টারে সীমিত আকারে একটি ইউনিট চালু করা হয়। বর্তমানে সেখানে ৫০ শয্যার পরিবর্তে মাত্র ২৫টি শয্যা দিয়ে সেবা চালু আছে, যা এলাকাবাসীর জন্য পর্যাপ্ত নয়।
স্থান সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্যাথলজি ও অপারেশন থিয়েটারও চলছে সীমিত পরিসরে। এতে রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ছুটতে, যা সময় ও অর্থ—দুটোই ব্যয়বহুল করে তুলছে।
হাসপাতালের কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসাসেবার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসক বা নার্সদের দোষ নেই, মূল সমস্যা জায়গার সংকট। নতুন হাসপাতাল চালু হলে সব সংকট দূর হয়ে যেত।’
স্থানীয় বাসিন্দা শাহালম মাদবর জানান, ‘নতুন হাসপাতাল নির্মাণ হলেও তা চালু না হওয়ায় আমাদের ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত খরচ ও কষ্ট—দুটোই বাড়ছে।’
আরেক বাসিন্দা ইমন মাদবর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নতুন ভবনে উন্নত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও জনগণ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি অচিরেই চালু করা জরুরি।’
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেজাউল হক বলেন, ‘বর্তমানে পুরোনো ভবনে পর্যাপ্ত জায়গা ও যন্ত্রপাতির অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। নতুন ভবনে সব আধুনিক ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বিরোধের জেরে একটি পক্ষ হাইকোর্টে রিট করেছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে দ্রুত হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবিলম্বে হাসপাতালটি চালু করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হোক।
Tag :
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ অন্তর হোসেন রকি, বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: +৮৮ ০১৬০৬৬১৮১৪৭
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত