
আলমগীর হোসেন,গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে ১১ বছর বয়সী এক শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে অভিযুক্তরা তাকে বারবার ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের মড়লপাড়া গ্রামে। ভুক্তভোগী শিশুর পিতা শনিবার (৯ আগস্ট) বিকালে চারজনকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও অভিযোগের ২০ ঘণ্টা পরও এ বিষয়ে নাকি কিছুই জানেন না থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী। ফলে এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়নি এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।
অভিযুক্তরা হলেন- মড়লপাড়া গ্রামের শামসুল হুদার ছেলে শফিকুল ইসলাম হায়দার, মৃত সামসুদ্দিন মড়লের ছেলে জসীম উদ্দীন (৩০), মো. রুবেল মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া (২৫) ও ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাব্বির আহমেদ (২০)। এদের মধ্যে বাবুল মিয়া শিশুটির চাচাতো ভাই ও শফিকুল ইসলাম হায়দার তার কাকা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। প্রায় ১৫ দিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে বৃষ্টির কারণে একটি দোকানে আশ্রয় নেয় সে। সেখানে অভিযুক্তরা কোল্ড ড্রিংকে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে তাকে পান করায়। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পুরো ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে এই ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে শিশুটিকে একাধিকবার গণধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে। ভয়ে শিশুটি প্রথমে পরিবারের কাউকে কিছু জানায়নি। কিন্তু অভিযুক্তরা ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সম্প্রতি ভুক্তভোগীর ভাইয়ের নজরে আসে। পরে পুরো ঘটনা পরিবারকে খুলে বলে শিশুটি।
ভুক্তভোগী শিশু বলেন, “সেভেনআপ খাওয়ার পর থেকেই আমার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর জঙ্গলে নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় পাই। তখন দেখি একজন ভিডিও করছিল। কেন করছো জানতে চাইলে সে বলেছিল, ‘তুই যদি এরপর আমাদের কাছে না আসস, তাহলে তোর বাবা-মাকে দেখাব, তারা ফাঁস নিয়ে মারা যাবে।’ এ সময় আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার আকুতি করলেও তারা কেউ শুনেনি।
এর কয়েকদিন পর আমাকে ভিডিও প্রকাশ ও বাবা-মাকে দেখানোর ভয় দেখিয়ে চাচাত ভাই বাবুল আমাকে সেই জায়গায় একাধিকবার নিয়ে গিয়েছে। এরপর চারজন খারাপ কাজ করেছে। আমি কান্নাকাটি করেছি, বলেছি আমি তোমার চাচাত বোন, তবুও আমাকে ছাড়েনি তারা। বারবার ভিডিও ডিলিট করার কথা বললে সে বলে, ‘তুই তো আসবি না, তাই তো করে রেখেছি।’ আমি এটার বড় ধরনের বিচার চাই, শাস্তি চাই।”
ভুক্তভোগীর ভাই বলেন, ‘আমরা নিম্নবিত্ত পরিবার বলে এত নিকৃষ্ট ঘটনার পরও এলাকার কারও সহযোগিতা পাচ্ছি না। উল্টো ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে অভিযুক্তরা আমাদের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমি আমার বোনের জন্য সঠিক বিচার চাই। এমন নৃশংস ঘটনা যেন আর কোনো মেয়ের সঙ্গে না ঘটে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা বলেন, ‘এ ঘটনার পর মেয়েটা বারবার বলছে, মনে হচ্ছে এখন আমি মরে যাই। তারা আবার ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে, সামাজিকভাবেও আমরা হেয় হচ্ছি। প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রবিবার (১০ আগস্ট) সকালে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনও অবগত নই। সারাদিন অনেক অভিযোগ আসে, তবে এটি অনেক বড় একটি বিষয়। অভিযোগের সময় সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি কেন। এখনই মেয়েকে আমার কাছে পাঠান, আমি থানায় রয়েছি।’