
ডেস্ক রিপোর্ট, দৈনিক সময়ের কন্ঠ :
রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের বাড়িতে চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ শুধু গুলশানেই নয়, বনানী ও মিরপুরসহ রাজধানীর একাধিক এলাকায় চাঁদাবাজি ও নানা দেনদরবারে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গুলশান থানা পুলিশের তথ্যমতে, রিয়াদ ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন থানায় গিয়ে নানা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতেন। এমনই একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে রিয়াদকে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে দেনদরবার করতে দেখা যায়। ভিডিওতে রিয়াদ নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা পরিচয় দিয়ে ওসিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে আরও ১০-১২ জন তরুণ-তরুণীও ছিলেন, যারা রিয়াদের কথায় সায় দেন।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, “গুলশানের পাশাপাশি বনানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা মৌখিকভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ করছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে গুলশানের ঘটনার সময় পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান কাজী গৌরব ওরফে অপু। তাকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি হাফিজুর।
সর্বাধিক আলোচিত আসামি রিয়াদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। ৫ আগস্টের আগেও তার বাবা ছিলেন একজন রিকশাচালক। পরিবারটি ভাঙা ঘরে বাস করত এবং কখনো কোরবানি দিতে পারেনি। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তাদের বসতঘর হয়ে ওঠে পাকা বাড়ি এবং কোরবানিতে দেড় লাখ টাকার গরু কেনা হয়—যা গ্রামে বিস্ময়ের জন্ম দেয়।
রিয়াদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে আলোচনায় আসে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির দুই ভাই—সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। তারাও গুলশানের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সিয়াম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি কর্মসূচির কমিটিতে যুক্ত ছিলেন।
তাদের বাবা এস এম কবিরুজ্জামান রাজশাহীর একটি সিএনজি স্টেশনে মাত্র সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। দুই ভাই রাজশাহীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় এসে পড়াশোনা শুরু করেন। আগে টিউশনি করে চললেও ৫ আগস্টের পর থেকে সেই টিউশনিও ছাড়েন।
এক সময় দারিদ্র্যের কারণে রাজশাহীতে ভাড়া বাড়িতে থাকা এ পরিবার কীভাবে হঠাৎ এত অর্থবিত্তের ধারক হয়ে উঠল—তা এখন তদন্তের বিষয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে এই চক্রের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত মিলেছে। পুরো ঘটনার পেছনে সংগঠিত প্রতারক চক্র থাকার সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।